এক পুরুষেরর প্ররোচনায় পরিবারটির সবাই করলেন আত্মহত্যা!

দিল্লিতে বুরারি এলাকায় একটি ঘরের ভেতরে ১১ জনকে রহস্যজনকভাবে মৃত পাওয়ার ঘটনায় তদন্তে জানা গেছে, পরিবারটির এক পুরুষ সদস্য সবাইকে গণআত্মহননে প্ররোচিত করেছেন।পুলিশ জানিয়েছে, হাতে পাওয়া প্রমাণ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মৃত্যু হতে পারে এমনটি তারা বিশ্বাসই করেননি। তাদের বিশ্বাস ছিল, ভগবান তাদের রক্ষা করবেন।রোববার সকালে দিল্লির ভাটিয়া পরিবারের প্রায় সবাইকে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। একসঙ্গে একটি পরিবারের এতগুলো সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা ভারতজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

ময়নাতদন্তের বিস্তারিত তথ্য ও বাড়িটি থেকে পাওয়া হাতে লেখা একগুচ্ছ নোট একসঙ্গে মিলিয়ে যাচাই করেছে পুলিশ।তারা জানিয়েছে, ৭৭ বছর বয়সী নারায়ণ দেবীর ছেলে ললিত ভাটিয়া সবাইকে এই গণআত্মহত্যার দিকে নিয়ে গেছেন।প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, নারায়ণ দেবীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জানিয়েছে তিনিও ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছেন।মৃতদেহগুলোর শরীরে ধস্তাধস্তির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

বাড়িটি থেকে উদ্ধার করা দুটি ঢাউস নোট খাতায় পাওয়া তথ্য থেকে পুলিশ বলছে, পরিবারটির কিছু সদস্য অন্যদের ফাঁসিতে ঝুলতে সহায়তা করেছেন।নোট খাতার লেখা বর্ণনার সঙ্গে তাদের যে অবস্থায় পাওয়া গেছে তা মিলে গেছে।তাদের সবার মুখমণ্ডল প্রায় সম্পূর্ণ মোড়ানো অবস্থায় ঢাকা, টেপ লাগিয়ে মুখ বন্ধ করা ও হাত পিছমোড়া করে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়।খাতাগুলোর নোটে লেখা ছিল- প্রত্যেকে তাদের নিজেদের হাত বাঁধবে ও ক্রিয়া যখন শেষ হবে, হাত বাঁধন মুক্ত করতে প্রত্যেকে প্রত্যেককে সাহায্য করবে।

ঘটনার তারিখটি পরিকল্পিত ছিল, এমন নজির পেয়েছে পুলিশ।নোটগুলোতে নারায়ণ দেবীকে বিবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার মরদেহের পাশে বিছানার ওপর একটি স্কার্ফ ও একটি বেল্ট পড়ে ছিল।পুলিশের সন্দেহ, তিনি মারা যাওয়ার পর কেউ একজন তার গলার ফাঁস খুলে তাকে ওভাবে রেখে দিয়েছে।নারায়ণ দেবীর পাশাপাশি মারা যাওয়া অন্যরা হলেন নারায়ণ দেবীর মেয়ে প্রতিভা (৫৭), তার মেয়ে প্রিয়াংকা (৩৩), নারায়ণ দেবীর দুই ছেলে ভবনেশ ভাটিয়া (৫০) ও ললিত ভাটিয়া (৪৫), ভবনেশের স্ত্রী সবিতা (৪৮) এবং তাদের তিন সন্তান মিনু (২৩), নিধি (২৫) ও ধ্রুব (১৫) এবং ললিতের স্ত্রী টিনা (৪২) ও তাদের ১৫ বছর বয়সী সন্তান শিভাম।

জানা গেছে, ৪৫ বছর বয়সী ললিত ভাটিয়া ১০ বছর আগে মারা যাওয়া তার বাবা গোপাল দাসকে হ্যালুসিনেশন করতেন।ললিত বিশ্বাস করতেন তার বাবা তাদের পুরো পরিবারকে পরিত্রাণের পথে নিয়ে যেতে চান এবং ২০১৫ সাল থেকে ওই বিষয়ে নির্দেশনা লিখিয়ে আসছেন।ললিত তার পরিবারকে বলেছেন, তিনি তার বাবার কাছ থেকে নিয়মিত বার্তা পাচ্ছেন।ওই নোটগুলোর একটিতে লেখা আছে- আমি আগামীকাল আসব অথবা তার পর দিন। যদি আমি না আসি তবে পরে আসব। ললিতের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হও না, যখন আমি আসি সে উত্তেজিত থাকে।

এদের মধ্যে ১৭ জুন প্রিয়াংকার বাগদান হয়েছিল এবং চলতি বছরের শেষ নাগাদ তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।এ আত্মহত্যার ঘটনায় কোনো ধর্মীয় গুরুর ভূমিকা ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ।তবে পরিবারটি ছিল কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। তারা বিশ্বাস করতেন, পৃথিবী ধ্বংসের সময় চলে আসছে।ললিত নীরবতা পালনের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। যে কারণে তিনি নোট লিখে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এমনকি তাদের মুদি দোকানে যেসব ক্রেতা আসতেন, তাদের সঙ্গেও মুখে কথা বলতেন না তিনি।